ঝিনাইদহ জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো নিয়ে আলোচনা করবো আজ। জেলা প্রশাসনের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী দর্শনীয় স্থানগুলো হলো:
ঝিনাইদহ জেলার দর্শনীয় স্থান

গোড়ার মসজিদ :
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার প্রাচীন জনপদ বারোবাজারের অন্তর্গত বেলাট দৌলতপুর মৌজায় অবস্থিত গোড়ার মসজিদ দক্ষিণ–পশ্চিম বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থল। ঝিনাইদহ–যশোর সড়ক ধরে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে এই মসজিদটির অবস্থান, যা বারোবাজার প্রত্ননগরীর ঐতিহ্যের একটি অপরিহার্য অংশ। বারোবাজার এলাকায় সুলতানি যুগের (১৪শ–১৬শ শতক) অসংখ্য স্থাপনার নিদর্শন এখনো পাওয়া যায়—আর সেই ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে গোড়ার মসজিদ একটি উল্লেখযোগ্য প্রত্নচিহ্ন।
শৈলকুপা শাহী মসজিদ :
ঝিনাইদহ জেলা সদর হতে সড়ক পথে বাস অথবা সিএনজি যোগে শৈলকুপা শাহী মসজিদে যেতে হয়(ঝিনাইদহ থেকে দুরত্ব ২৮ কি.মি)।
নলডাঙ্গা মন্দির :
ঝিনাইদহ থেকে বাস অথবা সিএনজি দ্বারা এই নলডাঙ্গা মন্দিরে যাওয়া যায় ( ঝিনাইদহ জেলা সদর হতে ২০ কি.মি)
কে.পি. বসুর বাড়ী :
ঝিনাইদহ থেকে বাস অথবা সিএনজি যোগে কে.পি বসুর বাড়ী যেতে হয়। ঝিনাইদহ জেলা সদর হতে ২০ কি.মি
গলাকাটা মসজিদ :
ঝিনাইদহ থেকে বাস অথবা সিএনজি দ্বারা এই গলাকাটা মসজিদটিতে যাওয়া যায় ( ঝিনাইদহ জেলা সদর হতে ৩০ কি.মি)
জোড়বাংলা মসজিদ :
ঝিনাইদহ থেকে বাস অথবা সিএনজি দ্বারা এই মসজিদটিতে যাওয়া যায় ( ঝিনাইদহ জেলা সদর হতে ৩০ কি.মি)
সাতগাছিয়া মসজিদ :
ঝিনাইদহ থেকে বাস অথবা সিএনজি দ্বারা এই মসজিদটিতে যাওয়া যায় ( ঝিনাইদহ জেলা সদর হতে ৩৪ কি.মি)
দত্তনগর কৃষি খামার :
ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ৪৮-৫০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়কপথে কালীগঞ্জ । এরপর কালীগঞ্জ হতে বাসযোগে জীবণনগর গিয়ে সেখান থেকে বাসযোগে দত্ত্বনগর যেতে হবে।
মল্লিকপুরের বটগাছ :
ঝিনাইদহ থেকে বাস অথবা সিএনজি দ্বারা এই প্রাচীন বটগাছটি দেখতে যাওয়া যায় ( ঝিনাইদহ জেলা সদর হতে ২৫ কি.মি)।
ঢোল সমুদ্র দীঘি :
ঝিনাইদহ শহরের কাছে অবস্থিত। এটি ভ্যান রিক্সা, ইজিবাইক যোগে এই বিখাত ঢোল সমুদ্র দীঘি যাওয়া যায়।(শহর থেকে ৪কি:মি: পশ্চিমে অবস্থিত)।

সিরাজ সা$ইর মাজার :
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা হতে সড়ক পথে সাতব্রীজ বাজার হয়ে হরিশপুর গ্রামে সিরাজ সাই’র মাজারে যাওয়া যাবে।
লালন শাহের ভিটা :
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা হতে সড়ক পথে সাতব্রীজ হয়ে হরিশপুর গ্রামে লালন শাহের ভিটায় যাওয়া যাবে।
ফকির মাহমুদ বিশ্বাসের মাজার :
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদ হতে উত্তর দিকে সড়ক পথে কুলবাড়ীয়া বাজার হয়ে ফকির মাহমুদ বিশ্বাসের মাজারে যাওয়া যায়।
পাঞ্জু শাহের মাজার :
হরিণাকুণ্ডু বাসস্ট্যান্ড অথবা হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদ হতে সড়কপথে সাতব্রীজ বাজার হয়ে হরিশপুর গ্রামে অবস্থিত পাঞ্জু শাহের মাজারে যাওয়া যায়।
মিয়ার দালান :
ঝিনাইদহ শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে মুরারিদহ নামক গ্রামে এটি অবস্থিত ।ভ্যান রিক্সা, ইজিবাইক যোগে এই মিয়ার দালান জমিদার বাড়ি যাওয়া যায় ।

গাজী কালু চম্পাবতী মাজার :
গাজী কালু চম্পাবতী মাজার শরীফ (Gazi Kalu Champabati Mazar) ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক বারোবাজারে অবস্থিত। বারোবাজারে ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে আসা আধ্যাত্মিক সাধকের মধ্যে গাজী, কালু ও চম্পাবতী ছিলেন অন্যতম। গাজী, কালু ও চম্পাবতীর পরিচয় নিয়েও বেশকিছু কিংবন্দন্তি রয়েছে।
জনশ্রুতি রয়েছে, বিরাট নগরের শাসক দরবেশ শাহ্ সিকান্দারের পুত্র বরখান গাজী ও কালু ছিলেন সিকান্দারের পালক পুত্র। বরখান গাজী সিলেট থেকে সুন্দরবন হয়ে গাজী নামে হিন্দু ও বৌদ্ধদের ইসলাম ধর্মে দীক্ষা দেন। গাজীর সাথে ছাপাইনগরের সামন্ত রাজা রামচন্দ্র ওরফে মুকুট রাজার মেয়ে চম্পাবতীর প্রেমের সম্পর্কে বাধা হয়ে দাড়ায় তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থা। মুকুট রাজা গাজী ও কালুকে শায়েস্তা করার জন্য তার সেনাপতি দক্ষিণা রায়কে হুকুম দেন। যুদ্ধে সেনাপতি দক্ষিণা রায় পরাজিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। গাজীর অনুসারির কাছে রাজা রামচন্দ্র পরাজিত হয়ে চম্পাবতীকে নিয়ে তার প্রধান বাড়ি ঝিনাইদহের বাড়িবাথানে চলে যান।
পরবর্তীতে গাজী অনুসারীদের সাথে রাজা রামচন্দ্রের বহু খণ্ড যুদ্ধের পর গাজী চম্পাবতীকে উদ্ধার করে বারোবাজারে ফিরে আসেন এবং বারোবাজারে তারা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। শ্রীরাম রাজার বেড় দীঘির দক্ষিণ পাড়ের আট ফুট লম্বা তিনটি মাজারের মধ্যে মাঝেখানেরটি গাজীর, পশ্চিমের কালুর ও পূর্ব দিকের কবরটি চম্পাবতীর বলে পরিচিত। এছাড়া গাজী কালু চম্পাবতী মাজারের কাছে আছে সেনাপতি দক্ষিণা রায়ের মাজার শরীফ।
গাজী, কালু ও চম্পাবতী নিয়ে অনেক চলচিত্র, পালা গান, মঞ্চ নাটক রচনা করা হয়েছে। মাজারের গা ঘেঁষে আছে ৬টি ছোট বড় বটবৃক্ষ। অনেকেই মানত পূরণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন রঙ্গের পলিথিন সুতোর মতো করে সবচেয়ে প্রাচীন বড় বট গাছে বেধে রাখে। প্রেমিকযুগল তাদের মনোকামনা ছোট ছোট কাগজে লিখে গাছের সাথে বেধে দেয়। ১৯৯২ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই তিনটি কবর বাঁধাই করে চারপাশে প্রাচীর ও খাদেমদের থাকার জন্য টিনশেড নির্মাণ করা হয়। গাজী কালু চম্পাবতী মাজারে হিন্দু, মুসলিম নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ মানত করতে আসে।
আরও দেখুন: গাজী কালু চম্পাবতী মাজার
কামান্না ২৭ শহীদের মাজার :
ঝিনাইদহ জেলা সদর হতে সড়ক পথে বাস অথবা সিএনজি যোগে যেতে হয়(ঝিনাইদহ থেকে দুরত্ব ৪২ কি.মি)।
কিভাবে যাবেন:
ঢাকার গাবতলী থেকে রয়েল, সোনার তরী, এসবি পরিবহণ, জেআর পরিবহণ, চুয়াডাঙ্গা, হানিফ, দর্শনা বা পূর্বাশা ডিলাক্স বাসে ঝিনাইদহ যাওয়া যায়। ঝিনাইদহ জেলা সদর থেকে বাস কিংবা সিএনজিতে বারোবাজার রোড দিয়ে ৩২ কিলোমিটার দূরে বাদুরগাছায় অবস্থিত গাজী কালু চম্পাবতীর মাজার যেতে পারবেন।
এছাড়া যশোরের পালবাড়ি থেকে গড়াই বা রূপসা বাসে বারোবাজার নেমে অটো বা ভ্যানে গাজী কালু চম্পাবতি মাজার যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন:
ঝিনাইদহ শহরে হোটেল রাতুল, হোটেল রেডিয়েশন, হোটেল জামান, নয়ন হোটেল, হোটেল ড্রিম ইন ও ক্ষণিকা রেস্ট হাউজ প্রভৃতি আবাসিক হোটেল রয়েছে।
কোথায় খাবেন:
বারোবাজারে সাধারণ মানের কিছু খাবার হোটেল আছে। আর ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরের কাছে ক্যাফে কাশফুল, কস্তুরি হোটেল,অজয় কিচেন, লিজা ফাস্ট ফুড, ইং কিং চাইনিজ, রূপসী বাংলা রেস্তোরা, সুইট হোটেল ও আহার সহ কয়েকটি ভালমানের খাবার হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে।

আরও দেখুন:
৯ thoughts on “ঝিনাইদহ জেলার দর্শনীয় স্থান”